প্রতিনিধি 30 June 2025 , 7:30:56 প্রিন্ট সংস্করণ
বছরের পর বছর ধরে বেনাপোল বন্দরে ট্রাক স্ক্যানিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চোরাচালান ও অনিয়মের আশঙ্কা বাড়ছে। নিরাপদ বাণিজ্য নিশ্চিত করতে দ্রুত স্ক্যানিং চালুর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর:
প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে আগত পণ্যবাহী ট্রাকের স্ক্যানিং কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে নিরাপদ বাণিজ্য কার্যত ঝুঁকিতে পড়লেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় উদ্বেগ বাড়ছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু স্ক্যানিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পণ্যচালানের মধ্যে চোরাচালান, মিথ্যা ঘোষণা ও অনিয়মের আশঙ্কা বেড়েছে।
বেনাপোল বন্দরের বাইপাস সড়কে কাস্টমস নিয়ন্ত্রিত মোবাইল স্ক্যানিং মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো পড়ে আছে। স্ক্যানিং কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটস। যান্ত্রিক ত্রুটির অজুহাতে মেশিনটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
তবে ইতোমধ্যে বেনাপোল কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালে একটি নতুন স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করা হয়েছে এবং তা পরীক্ষামূলকভাবে সফলভাবে চালানো হলেও তিন মাস পার হলেও এখনো আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়নি।
এদিকে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে গত এক বছরে ট্রাক থেকে ১৬টি স্বর্ণের চালান উদ্ধার করেছে বিএসএফ। অথচ বাংলাদেশে কাস্টমসের নজরদারি দুর্বল থাকার কারণে এসব বড় চালান ধরা পড়ছে না। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আসছে মাদকসহ আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যও।
আমদানিকারক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “স্ক্যানিং মেশিন বন্ধ থাকায় দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা মেশিন কোনো কাজেই আসছে না— বরং সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে।”
ট্রাক চালক আশিক বলেন, “স্ক্যানিং সচল থাকলে আমাদের হয়রানি হতো না। কেউ ট্রাকে অবৈধ পণ্য তোলার সাহস করতো না।”
সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী সাজেদুর রহমান বলেন, “বাণিজ্য সহজীকরণ, খালাস প্রক্রিয়া দ্রুততর করা এবং চোরাচালান রোধে স্ক্যানিং অপরিহার্য। এটি সচল রাখলে নিরাপদ বাণিজ্য নিশ্চিত হবে।”
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) শামিম হোসেন বলেন, “বৈধ পথে নিরাপদ বাণিজ্য নিশ্চিত করতে কাস্টমসকে দ্রুত স্ক্যানিং কার্যক্রম চালু করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটস-এর কর্মকর্তা বনি আমিন জানান, “পুরোনো মোবাইল স্ক্যানিং মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে অচল। তবে নতুন স্ক্যানিং মেশিন সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ট্রাক পাঠাচ্ছে না, তাই আমাদের বসে থাকতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৭ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৩৮টি ভারতীয় পণ্য খালাসের আগে স্ক্যানিং বাধ্যতামূলক করে। এসব পণ্যের চালানে বেশি অনিয়ম ও শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটত। স্ক্যানিং চালুর পর এসব অনিয়ম কিছুটা কমলেও পরবর্তীতে যান্ত্রিক ত্রুটির অজুহাতে বছরের বেশির ভাগ সময়ই মেশিন বন্ধ রাখা হয়েছে।
নিরাপদ ও স্বচ্ছ বাণিজ্য নিশ্চিত করতে স্ক্যানিং কার্যক্রম দ্রুত চালুর দাবিতে সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ব্যবসায়ী ও সচেতন মহল।