অন্যান্য

মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: ইসরায়েলে ১০০ কোটি ডলারের নতুন ঘাঁটি ও অস্ত্রের মজুত!

  প্রতিনিধি 9 July 2025 , 12:45:42 প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক 

ঢাকা, ৯ জুলাই ২০২৫: মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক প্রভাব আরও সুদৃঢ় করতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলে সামরিক ঘাঁটি সম্প্রসারণ এবং অস্ত্রের মজুত ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানানো হয়েছে। এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে আসছে যখন ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের রেশ কাটেনি।
বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ:
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলে বিশাল সামরিক অবকাঠামো গড়ে তুলছে। এর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক বিমানঘাঁটি, সুবিশাল গোলাবারুদের গুদাম এবং অন্যান্য কৌশলগত সামরিক স্থাপনা। বর্তমানে এসব প্রকল্পের ব্যয় ২৫ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে তা ১০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রকল্পের বিস্তারিত:
ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, সরকারি নথি অনুযায়ী, এসব অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ আগ্রহী ঠিকাদারদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করেছে। প্রাথমিকভাবে জুনে এই উদ্যোগ শুরু করার কথা থাকলেও সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের কারণে তা সাময়িকভাবে পিছিয়ে দেওয়া হয়।
এই প্রকল্পগুলোর আওতায় পুরোনো বিমানঘাঁটিগুলোর সংস্কারের পাশাপাশি নতুন করে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের জন্য হ্যাঙ্গার, অত্যাধুনিক জ্বালানি সরবরাহ কেন্দ্র, মেরামতের ঘর এবং বিশাল গোলাবারুদের গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। একটি প্রকল্পে কেবল যুদ্ধবিমানের জন্য হ্যাঙ্গার ও মালপত্র রাখার ঘর তৈরিতেই ১০ কোটি ডলার ব্যয় হতে পারে। অন্যদিকে, একটি সম্পূর্ণ হেলিকপ্টার ঘাঁটি নির্মাণে প্রায় ২৫ কোটি ডলার খরচ হতে পারে।
এছাড়াও, গোলাবারুদ সংরক্ষণের জন্য ১০ কোটি ডলারের একটি নতুন গুদাম নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রকল্পে আগামী সাত বছরের জন্য নির্মাণ, মেরামত এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলবে, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ কোটি ডলার পর্যন্ত। যদিও এই প্রকল্পগুলোর সঠিক অবস্থান প্রকাশ করা হয়নি, তবে জানা গেছে যে এগুলো ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
অর্থায়ন ও সামরিক সহায়তা:
এই বিপুল অর্থের একটি বড় অংশ আসছে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সামরিক সহায়তা তহবিল থেকে। এই তহবিলের আওতায় ইসরায়েল প্রতিবছর প্রায় ৩৮০ কোটি ডলার পেয়ে থাকে। এই অর্থ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ সিদ্ধান্তে ব্যয় করা হয় এবং মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঠিকাদারদের মধ্যেই তা বিতরণ করা হয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল অতিরিক্তভাবে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার সামরিক সহায়তা পায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে, যা এই সামরিক সম্প্রসারণে সহায়ক হয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র পূর্বেও ইসরায়েলের সামরিক অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করেছে। ২০১২ সালে একটি বিমানঘাঁটিতে তারা ‘৯১১ নম্বর স্থাপনা’ নামে একটি গোপন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করেছিল।
সংঘাতের মাঝে প্রস্তুতি:
এদিকে, বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে সাম্প্রতিক ১২ দিনের ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে ইরান থেকে ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। তবে, বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনা এই যুদ্ধের আগেই গ্রহণ করা হয়েছিল, যা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী সামরিক প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ