অন্যান্য

শার্শা ও ঝিকরগাছা থানার দুই ওসির ভুমিকা রহস্যজনক, জেলা পুলিশের তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ

  প্রতিনিধি 18 August 2025 , 10:55:07 প্রিন্ট সংস্করণ

news desk

দুই থানার ওসি বিশেষ অভিযান চালিয়ে জব্দ করেছিল অর্ধশতাধিক ভারতীয় মোবাইল ফোন, একই সাথে আটক করেছিল দোকান মালিককে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তারা দুজনেই মোবাইল ও চোরাকারবারিকে রেখে চলে আসেন। তবে, শেষ রক্ষা হয়নি তার। জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিবার ওই মোবাইল ব্যবসায়ীর বাড়িতে অভিযান চালান। উদ্ধার করা হয় ৪৪টি ভারতীয় মোবাইল ফোন, একই সাথে আটক করা হয় সেই ব্যবসায়ীকে। যা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনাটি যশোর জেলার শার্শা ও ঝিকরগাছা সীমান্তবর্তী এলাকা নাভারণ পুরাতন বাজারে। জেলা পুলিশের এ অভিযানে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা।স্থানীয় সূত্র জানায়, নাভারণ বাজারের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সাইফুল ইলেক্ট্রনিক্স এর মালিক সাইফুল দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় ওচোরাই মোবাইলের ব্যবসা করে আসছিলেন। একটি দোকান থেকে শুরু করে কয়েকদিনের ব্যবধানে এখন তার ওই বাজারেই তিনটি দোকান হয়েছে। এর মধ্যে একটি রয়েছে টিভি, ফ্রিজ ও এসির শোরুমও। সম্প্রতি তিনি ভারত থেকে শতাধিক মোবাইল নিয়ে আসেন,যার একেকটির দাম বাংলাদেশি ১০ হাজার থেকে শুরু করে অর্ধলাখ টাকা। এছাড়াও শার্শার একটি দোকান থেকে কিছু মোবাইল ফোন চুরি হয়। এ ঘটনায় শার্শা থানায় মামলা হয়। ওই মোবাইলও কিনে আনেন সাইফুল। এসব মোবাইল তিনি তিন দোকানে বিক্রি করছিলেন। এসব বিষয় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে বিষয়টি নজরে আসে শার্শা ও ঝিকরগাছা থানা পুলিশের। গত ১৫ আগস্ট বিকেল চারটায় দুই থানা পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালায় সাইফুলের দোকানে। টানা দুই ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে অর্ধশতাধিক মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। একই সাথে সাইফুলকে আটক করা হয়। কিছু সময়ের মধ্যেই ঘটনাস্থলে হাজির হন সাইফুলের ভাই স্থানীয় বিএনপি নেতা লেন্টু হাজী। এসময় তার সাথে ছিল আরও ১০ থেকে ২০ জন। এক পর্যায়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় হয়। শেষমেষ দুই থানা পুলিশই সাইফুল ও মোবাইল রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
বিষয়টি স্থানীয়রা জানান এই প্রতিবেদককে। শুক্রবার রাতেই এ বিষয়ে কথা হয় ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ নূর মোহাম্মদ গাজীর সাথে। তিনি জানান, ঝিকরগাছা থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়নি, অভিযান চালিয়েছে শার্শা থানা পুলিশ। এরপর কথা হয় শার্শা থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম রবিউল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ওটা শার্শার এলাকা না। তিনি শুনেছেন ঝিকরগাছা থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়েছে। তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।
শনিবার সরেজমিনে যাওয়া হয় নাভারণ পুরাতন বাজারে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, দুই থানা পুলিশই শুক্রবার বিকেলে সাইফুলের দোকানে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক ও মোবাইল উদ্ধার করে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণেই পুলিশ চলে যায়। তারা দাবি করেন, এসময় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় হয়। অন্যদিকে, সাইফুল জানান তার দোকানে পুলিশ কোনো অভিযানই চালায়নি। এমনকি তিনি অবৈধ কোনো মোবাইল ফোন বিক্রিও করেন না।
শনিবার দুপুরে এ বিষয়ে এই প্রতিবেদকের কথা হয় জেলা পুলিশ সুপার রওনক জাহানের সাথে। পুলিশ সুপার এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এদিকে, পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশ সুপার বিষয়টি জানতে পেরেই দুই থানার ওসিকে তলব করেন। একই সাথে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) আহসান হাবীবকে দ্রুত বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, রোববার সকালে ডিবি পুলিশকে সাথে নিয়ে সাইফুলের বাড়িতে অভিযান চালান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) আহসান হাবীব নিজেই। বাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয় ৪৪টি মোবাইল ফোন। আটক করা হয় মোবাইল ব্যবসায়ী সাইফুলকে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) আহসান হাবীব জানান, গোপন সংবাদের প্রেক্ষিতে সাইফুলের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। তার বাড়ি থেকে ৪৪টি অক্ষত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। সেসব মোবাইলের কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি সাইফুল। ফলে তাকে আটক করা হয়েছে। তবে, মোবাইল ফোনগুলো চোরাই না ভারতীয় কিনা সেটা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। সোমবার বিস্তারিত জানানো হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই সাইফুলের ভারতীয় মোবাইল ফোন চোরাই পথে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। পরে তিনি তার কাছথেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় তা সরবরাহ করেন

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ