প্রতিনিধি 20 August 2025 , 7:56:16 প্রিন্ট সংস্করণ
এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো আবারো খুলে দেওয়া হয়েছে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট। কাপ্তাই হ্রদের পানির বিপদসীমার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় বুধবার (২০ আগস্ট) রাত ৮টায় কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেটের সব কটি ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়েছে।
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে বিপদসীমায় পৌঁছে যাওয়ায় গেটগুলো খুলে দেওয়া হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাত ১০টায় গেট খোলার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল।কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মাহমুদ হাসান বলেছেন, হ্রদের পানির উচ্চতা পুনরায় ১০৮ এমএসএল (মিনস সি লেভেল) অতিক্রম করেছে। যা বিপদসীমার কাছাকাছি হওয়ায় উজান ও ভাটি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণে বুধবার রাত ৮টার দিকে স্পিলওয়ের ১৬টি গেট ছয় ইঞ্চি পরিমাণ উঠিয়ে পানি নিষ্কাশন শুরু করা হয়। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। পানি ছাড়ার কারণে ভাটি এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেছেন তিনি। রাত ৮টায় কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা ১০৮.৩৫ এমএসএল। হ্রদের পানি সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ১০৯ এমএসএল।ব্যবস্থাপক আরও জানান, বর্তমানে হ্রদের ইনফ্লো ও বৃষ্টিপাত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ইনফ্লো বেশি হলে অর্থাৎ পানির লেভেল অপ্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি পেলে স্পিলওয়ের (জলকপাট) গেট খোলার পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা হবে।
এদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট চালু রেখে প্রতি সেকেন্ডে কাপ্তাই হ্রদ থেকে কর্ণফুলী নদীতে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি নির্গত হচ্ছে। এতে প্রতি সেকেন্ডে মোট ৪১ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে নির্গত হচ্ছে। বর্তমানে এই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ২২০ মেগাওয়াট।উল্লেখ্য, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমার ওপর অতিক্রম করায় অর্থাৎ ১০৯ ফুটের প্রায় কাছাকাছি চলে আসায় চলতি মাসের গত ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় উজান হতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লেকের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এরপর কেন্দ্রের জলকপাট সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ ফুট পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়। অবশেষে পানি ছাড়ার সাতদিন পর হ্রদে পানির উচ্চতা কমে আসায় গত ১২ আগস্ট সকাল নয়টায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল রাঙ্গামাটির কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট।পদস্থকর্মকর্তা ও ডিবি হারুনের ছত্রছায়ায় অপু-আকতার চক্রের চাঁদাবাজি, জমি দখলআওয়ামী শাসনামলের শেষ এক দশকে রাষ্ট্রক্ষমতার ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছে অপু হারুন চাঁদাবাজ ও দখলদার চক্র। মাদারীপুরের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী কাজী আশিকুর রহমান অপু ও ডিবি’র সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে চলা সিন্ডিকেট এখনো রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে। আর দেশে অপুর অপকর্মের সব কিছু দেখভাল করছে আক্তার হোসেন নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী।অপুর বাবা প্রয়াত শিল্পী আনোয়ার হোসেন ছিলেন শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সহচর। সেই সুবাদে বাবার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হন মাদারিপুরের অপু। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক ডিবি প্রধান হারুন ও আওয়ামীলিগের কিছু নেতাকর্মীদের পরিবারের দেখাশোনা করার সূত্রে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতাকে হাতিয়ার বানিয়ে লুটেরা তন্ত্র কায়েম করেছিলো অপু। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস করেনি কেউ। বর্তমান সরকারের সময়েও কৌশলে তারা সক্রিয় রয়েছে। তাই এখনো মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।অপু হারুন সিন্ডিকেটের অন্যতম টার্গেট অন্যের জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করা। সিন্ডিকেটটি প্রথমে বিপুল সম্পদ আছে তবে রাজনৈতিক ছত্রছায়া দুর্বল, এমন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে শিকার বানায়। ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার এবং গাজীপুরে জমি উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও শিকার বানানোর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। চক্রটি গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে টার্গেট করা ব্যাক্তির আর্থিক সক্ষমতা, পারিবারিক দুর্বলতা এবং আইনি ত্রুটি সম্পর্কে জানার পর কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে। এক্ষেত্রে, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ ক্ষমতা অপব্যবহার করে অপুকে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে।দ্বিতীয় ধাপে চক্রটির মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে, রাজউকে থাকা সদস্যদের মাধ্যমে চাপ দিতেন। একইসাথে সাবেক এনবিআর এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ট্যাক্স তদন্তের নামে টার্গেটকৃত প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করাতেন। ভুক্তভোগী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সংকটে ফেলে দূর্বল করার পর, দখল করা হতো জমি ও প্রতিষ্ঠান।চক্রটি মানুষের লোভ ও সহানুভূতিকেও হাতিয়ার বানিয়েছে বিভিন্ন সময়। অর্থের প্রলোভনে পড়া ব্যক্তিদের দিয়ে ভুয়া মামলা করানো হয়েছে টার্গেট করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব কাজে ব্যবহার করা হয়েছে মিডিয়াকেও। ‘অত্যাচারিত সংখ্যালঘু’ বা ‘ভূমিহীন গরিব’ এমন মনগড়া গল্প প্রচারের মাধ্যমে আদায় করতেন জনসমর্থন। জমি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই এমন ব্যক্তিদের ভুয়া মামলার পেশাদার ভাড়াটে সাক্ষী বানানোর অভিযোগ রয়েছে।ভুক্তভোগী মালিকদের হারুন ও অপু ভয়ভীতি দেখাতে অনেক সময় ডেকে নিয়ে যেতেন ডিবি কার্যালয়ে। সেখানে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সমঝোতার মিথ্যা নাটকও সাজাতো এই চক্র। সমোঝোতার নামে দাবি করা হতো কোটি টাকার চাঁদা। টাকা দিতে রাজি না হলে ভুক্তভোগীদের প্রকল্পের লাইসেন্স বাতিল, ব্যাংক ঋণ স্থগিত, এমনকি গুমের মামলায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকিও দিত চক্রটি।অভিযোগ আছে, অপু হারুনের হুমকি কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকত না। টার্গেট করা ব্যক্তির সন্তানের স্কুল রুটিন, স্ত্রীর চিকিৎসা রিপোর্ট রাখা হতো গোয়েন্দা নজরদারির আওতায়। আবার চাঁদার টাকা আদায়ের পরও তাদের তাণ্ডব থামত না; ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ নির্মূল করার নতুন মিশন চালিয়ে যেত ভয়ঙ্কর চক্রটি। এই সিন্ডিকেটের ভয়াবহ শক্তি ছিলো রাজনৈতিক যোগাযোগ। আওয়ামী লীগ আমলে উচ্চপর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় অপু-হারুন চক্র দুদক, এনএসআই, রাজউককে ব্যক্তিগত বাহিনীতে রূপান্তর করারও অভিযোগ রয়েছে।চক্রটি অন্যের ভূমি, প্রতিষ্ঠান দখল এবং চাঁদাবাজির মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। আবার জাল দলিলের তৈরী করেও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় জমির মালিক হয়েছে অপু দম্পতিও। অতীতে সংবাদ প্রচার করে অথবা আইনের আশ্রয় নিয়েও ন্যায়বিচার পায়নি ভুক্তভোগী মালিকরা।
অপুর আরেক সহদর কাজী মশিউর হোসেন দিপু। রাজধানীর পুরান ঢাকার টিকাটুলীর বাসিন্দা তিনি। জাল দলিল এবং নথি পত্র তৈরি, প্রতারনা, চাঁদাবাজিসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অপুর মতো দিপুরও অপরাধের সহযোগী তার স্ত্রী শারমিন আক্তার। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে দিপুর সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করালেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে নেতা-মন্ত্রীদের হাত ধরে অবৈধ টাকার পাহাড় গড়ে তোলা অপু এখন খোলস বদলে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও সিআইপি পদমর্যাদার অপব্যবহার করে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, পতিত সরকারের সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী শাহাজাহান খান ও আ.ফ.ম বাহা উদ্দিন নাছিম-সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে প্রতারনা করে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে অপু।অভিযোগ আছে বর্তমান সরকারি ব্যবস্থায়ও অপু-হারুন-আকতার চক্রের সহায়তাকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। মাদারিপুরসহ রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন জমি মালিকদের শিকার বানাচ্ছে এই চক্র।