অন্যান্য

কিশোরগঞ্জের শহিদী মসজিদের সামনে নৈরাজ্য, পবিত্রতা প্রশ্নবিদ্ধ।

  প্রতিনিধি 22 August 2025 , 7:39:03 প্রিন্ট সংস্করণ

নিজাম উদ্দীন 
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী শহিদী মসজিদ, যার ইতিহাস ও গুরুত্ব জেলার মানুষের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চেতনাকে উজ্জীবিত করে রেখেছে, আজ সেই পবিত্র স্থানের সামনের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। রাস্তাজুড়ে অবৈধ দখল, যানজট, চাঁদাবাজি আর হকারদের দৌরাত্ম্যে শহরের কেন্দ্রস্থলটি পরিণত হয়েছে এক দুর্ভোগের নাম। অথচ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব জেনেও রয়েছে নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
রাস্তা নয় যেন বাজার আর স্ট্যান্ড: পবিত্রতা হারাচ্ছে মসজিদ চত্বর
প্রতিদিন শত শত মুসল্লি শহরের প্রাণকেন্দ্রের এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসেন। কিন্তু মসজিদের সামনে রাস্তাজুড়ে অবৈধ অটো স্ট্যান্ড, দোকানপাট ও ফুটপাত দখল করে বসা হকারদের কারণে নামাজে যেতে তাদের পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়। পবিত্র স্থানের সামনে প্রতিনিয়ত চলছে চিৎকার, হর্ন, বিশৃঙ্খলা—যা নামাজের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।
চাঁদার টাকায় চলে অবৈধ অটো স্ট্যান্ড!
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহিদী মসজিদের সামনের এই অবৈধ অটো স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ২০০টি ব্যাটারিচালিত অটো চলাচল করে নীলগঞ্জ ও তাড়াইলসহ আশপাশের এলাকায়। এই স্ট্যান্ড ব্যবস্থাপনার নামে প্রতিটি অটো থেকে আদায় করা হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে, যা দিনে দিনে দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অটোচালক বলেন,
> “প্রতিদিন আমাদের বাধ্য হয়ে চাঁদা দিতে হয়। না দিলে গাড়ি দাঁড় করাতে দেয় না, এমনকি অনেক সময় মারধরেরও শিকার হতে হয়।”
অবৈধ চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে কেউই সুনির্দিষ্টভাবে নাম বলতে রাজি হয়নি। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের জ্ঞাতসারে এসব চলছে।
‘সব জানে পুলিশ, কিন্তু চুপ’: ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী
শহিদী মসজিদ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মো. শরীফ মিয়া বলেন,
> “এই অবস্থা বহু বছর ধরে চলছে। সামনে পুলিশ থাকে, সার্জেন্ট বসে, কিন্তু দেখেও কিছু বলে না। মনে হয় এদেরও ভাগ আছে।”
অন্য এক ব্যবসায়ী হোসেন আলী বলেন,
> “মসজিদের সামনে রাস্তা বন্ধ করে দোকান বসানো, গন্ধময় খাবার বিক্রি—সব কিছু মসজিদের পবিত্র পরিবেশের সাথে যায় না। আমরা অনেকবার বলেছি, কেউ শোনে না।”
প্রশাসনের দায়সারা বক্তব্য
এই বিষয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় যোগাযোগ করা হলে এক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন,
> “আমাদের কাছে এ পর্যন্ত লিখিত কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব।”
তবে এলাকাবাসীর প্রশ্ন—লিখিত অভিযোগ না পেলেই কি পুলিশ কিছু দেখতে পায় না? চোখের সামনে এমন অনিয়ম চললেও কেন তারা চুপ করে থাকেন?
সমাধান কোথায়?
সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করছে, শহরের এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় স্থানের সামনে এভাবে অরাজকতা চলতে থাকলে তা কেবল ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুভূতিতে আঘাত হানবে না, বরং পুরো শহরের সুশৃঙ্খলতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
অবিলম্বে মসজিদের আশপাশের রাস্তা থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং একটি সুশৃঙ্খল অটো স্ট্যান্ড নির্ধারণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন এলাকাবাসী।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ