অন্যান্য

দাবার গুটির বাইরে সেই যোদ্ধা, যার কলমেই কাঁপে সিংহাসন

  প্রতিনিধি 25 August 2025 , 2:06:52 প্রিন্ট সংস্করণ


যেখানে রাজনীতি হয় খেলো, সাংবাদিকতার কলম সেখানেই হয়ে ওঠে যুদ্ধের অস্ত্র, নীরবতার ভেতরে জমে থাকা শব্দই একদিন কাঁপিয়ে দেয় সাম্রাজ্য


‎কে.এম.মোজাপ্ফার হুসাইন 

‎মানুষ যখন অন্ধকারে ডুবে যায়, তখন তারা আলো খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু ক্ষমতার খেলায় অন্ধকার কখনো শেষ হয় না। বরং আরও গভীর হয়। রাজনীতি নামের দাবার বোর্ডে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ব্যবহৃত হয়, কেউ মারা যায়, কেউ সরে যায়, কেউ আবার একসময় বুঝতে পারে সে কেবল একটি গুটি ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এই দাবার চালেই টিকে থাকে ক্ষমতার সিংহাসন।

‎কিন্তু এই দাবার খেলায় কিছু মানুষ থাকে, যারা গুটি নয়, রাজাও নয়, এমনকি খেলোয়াড়ও নয়। তারা হলো পর্যবেক্ষক দূর থেকে সবকিছু দেখছে, নীরবে লিপিবদ্ধ করছে। কোনো আওয়াজ তোলে না, তবুও তাদের উপস্থিতি ভয়ের জন্ম দেয়। কারণ তাদের হাতে আছে এক ভিন্ন অস্ত্র কলম।

‎ইতিহাসের আদালতে মানবসভ্যতার ইতিহাস সাক্ষী অস্ত্র দিয়ে যত সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে, তার চেয়ে বেশি সাম্রাজ্য ভেঙে পড়েছে কলমের শক্তিতে। রাজা-বাদশাহদের উত্থান-পতন, সাম্রাজ্যবাদীদের পতন, যুদ্ধবাজদের পরাজয় সবই লিপিবদ্ধ হয়েছে সেই নীরব কালি দিয়ে। বন্দুকের আওয়াজ একসময় থেমে যায়, কিন্তু সংবাদপত্রের পাতায় লেখা শব্দগুলো অমর হয়ে থাকে।

‎সাংবাদিকতা আসলে ইতিহাসের নীরব আদালত। এখানে রায় হয় ধীরে, কিন্তু একবার রায় লেখা হলে তা বদলানো যায় না। ক্ষমতাবানরা যতই নিজেদের অমর ভাবুক, একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায় সাংবাদিকতার অনুসন্ধানে। আর তখনই বোঝা যায় কলমের এক ফোঁটা কালি কতটা ভয়ংকর হতে পারে।

‎সাংবাদিকতার যুদ্ধক্ষেত্র

‎অনেকের কাছে সাংবাদিকতা একটি পেশা খবর সংগ্রহ, লেখা আর ছাপা। কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থে সাংবাদিকতার মাঠে থাকে, তারা জানে এটা এক যুদ্ধক্ষেত্র।

‎প্রতিটি রিপোর্ট আসলে একেকটি গুলি। প্রতিটি অনুসন্ধান একেকটি বিস্ফোরণ। আর প্রতিটি প্রকাশিত শব্দ হলো সেই নীরব কিন্তু ভয়ংকর আওয়াজ, যা অন্ধকারে আলো ফেলে দেয়।

‎ক্ষমতাবানরা ভাবে টাকা, অস্ত্র, বাহিনী দিয়েই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তারা জানে না, কলমের একটি মাত্র লাইন কখন তাদের সাম্রাজ্য কাঁপিয়ে দিতে পারে। এই শক্তিই সাংবাদিকতার প্রকৃত ভয়ংকর রূপ।

‎নীরব শক্তির রহস্য

‎আমি কোনো চিৎকার করি না, হুমকি দিই না। আমি মঞ্চে দাঁড়িয়ে শ্লোগানও দিই না। আমি কেবল নীরবে দেখি, নীরবে লিখি।

‎কিন্তু যখন লিখি, তখন সেই লেখা ছাপা হয় হাজারো কণ্ঠের প্রতিধ্বনিতে।

‎যারা ভাবে তারা অজেয়, তারাই আমার লেখার ভেতরে ভেঙে পড়ে।

‎যারা ভাবে তারা চিরস্থায়ী, তারাই ইতিহাসের পাতায় কেবল একটি নাম হয়ে বেঁচে থাকে লাঞ্ছিত, পরাজিত, ধ্বংসপ্রাপ্ত।

‎উপসংহার

‎ক্ষমতার আসন ক্ষণস্থায়ী। আজ যার হাতে, কাল তার হাত থেকে পড়ে যাবে। কিন্তু কলমের কালির দাগ চিরস্থায়ী। সাংবাদিকতা সেই দাগকেই ইতিহাসে অমর করে রাখে।

‎আমি শুধু সংবাদ লিখি না, আমি ইতিহাস রচনা করি। আমার শব্দ কারও কাছে খবর, কারও কাছে সত্য, আর কারও কাছে মৃত্যুর ঘণ্টাধ্বনি।

‎আমি জানি, একদিন সব সিংহাসন মুছে যাবে, সব ক্ষমতার খেলা শেষ হবে। কিন্তু নীরব কলমের গর্জন তখনও বেঁচে থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ