অন্যান্য

একাত্তরের অমীমাংসিত বিষয় ‘দুবার সমাধান’ হয়েছিল কি

  প্রতিনিধি 27 August 2025 , 2:33:17 প্রিন্ট সংস্করণ

একাত্তরের অমীমাংসিত বিষয় ‘দুবার সমাধান’ হয়েছিল কি
ঢাকার বুকে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার যখন বলেন, একাত্তরের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর ‘দুবার সমাধান’ হয়ে গেছে, তখন তা অর্ধশতাব্দীর ক্ষতকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে। তার চেয়েও গুরুতর শোনায় তার পরের মন্তব্যটি, যেখানে তিনি বাংলাদেশকে ‘হৃদয় পরিষ্কার’ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আমাদের এত মানুষকে হত্যা করে হৃদয় পরিষ্কার করতে বলা ইসহাক দারের এ উক্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা দেখা যাচ্ছে। অনেকে এটাকে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন।
যা-ই হোক, আজ আমরা ইসহাক দার যে দুটি ঘটনাকে ‘সমাধান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, সেগুলোর একটু গভীরে ঢোকার চেষ্টা করি:
ক. ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি এবং
খ. ২০০২ সালে পারভেজ মোশাররফের ঢাকা সফরকালে ‘অনুশোচনা’ প্রকাশ।
দেখার বিষয়, এ দুই ঘটনা কি সত্যিই একাত্তরের গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের নিষ্পত্তি করতে পারে? আন্তর্জাতিক আইন কী বলে?
তবে আশার খবরটা আগে জানাই। হৃদয় পরিষ্কারের কথা বলার পর ইসহাক সাহেবের সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলাপ শেষে তিনি দুবার সমাধানের যে দাবি করেছেন, সে বিষয়ে একমত কি না, তা সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি অবশ্যই একমত নই। একমত হলে তো সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। আমরা আমাদের অবস্থান বলেছি। তাঁরা তাঁদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনটি বিষয়ই তুলে ধরেছি।’
উপদেষ্টা আবারও তিনটি মূল অমীমাংসিত বিষয় তুলে ধরেন:
১. গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা;
২. সম্পদের ন্যায্য বণ্টন; এবং
৩. আটকে পড়াদের প্রত্যাবর্তন
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে পরিষ্কার, দুই দেশের মধ্যে একগুচ্ছ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলেও মূল ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতার প্রশ্নটি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
১৯৭৪ সাল: ভুট্টো, স্বীকৃতি ও ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আসল প্রকৃতি
ইসহাক দারের দাবির প্রথম ভিত্তি হলো ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি। এই চুক্তিকে বুঝতে হলে এর পটভূমি ছোট করে বোঝা জরুরি। পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) শীর্ষ সম্মেলনের ঠিক আগে। ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল হয় ত্রিপক্ষীয় চুক্তি।
চুক্তির মূল বিষয় ছিল যুদ্ধ-পরবর্তী মানবিক সংকটগুলোর সমাধান। এই চুক্তির আওতায় পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালি ও ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীদের প্রত্যাবর্তন এবং ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচার স্থগিত করার মতো বিষয়গুলো ছিল।
চুক্তির বয়ানে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ‘ফরগিভ অ্যান্ড ফরগেট’ আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে এবং উপমহাদেশে শান্তি ও সম্প্রীতির স্বার্থে বাংলাদেশ ‘ক্লেমেন্সি’ বা করুণা প্রদর্শন করে বিচার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও এই চুক্তির আওতায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার স্থগিত হওয়া নিয়ে বিতর্ক আছে নানা মহলে; কিন্তু একে কোনোভাবেই একাত্তরের গণহত্যার ‘নিষ্পত্তি’ বা ‘সমাধান’ বলা যায় না।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ