প্রতিনিধি 28 August 2025 , 12:32:08 প্রিন্ট সংস্করণ
ফয়সাল হায়দার, স্টাফ রিপোর্টার।
মাগুরার মহম্মদপুরে আলোচিত-সমালোচিত ফেসবুক ফেক আইডি “খবর মহম্মদপুর”–এর বিরুদ্ধে অবশেষে অভিযান পরিচালনা করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। প্রতারণা, মানহানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ডিবির একটি বিশেষ টিম গত ২৭ আগস্ট ২০২৫ ইং বুধবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রমাণসাপেক্ষে ফেক আইডি পরিচালনা, ভুয়া তথ্য প্রচার, ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় এবং মানহানিকর কনটেন্ট ছড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি “খবর মহম্মদপুর” নামে এই ফেক আইডিটি খোলা হয়। খোলার পর থেকেই স্থানীয় রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন পেশাজীবী, মহম্মদপুর প্রেসক্লাবের সদস্য, এমনকি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেও নানা বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর পোস্ট দেওয়া শুরু হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোপন ভিডিও বানানো, অশ্লীল ও নগ্ন ছবি সম্পাদনা করে প্রকাশ করা এবং ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে যেকোনো ব্যক্তিকে অপকর্মে জড়িত দেখানো ছিল এ চক্রের নিয়মিত কৌশল। এসব অপপ্রচারের ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে একাধিক বিকাশ নম্বর ব্যবহার করে হাতিয়ে নেওয়া হয় বিপুল অর্থ। তদন্তে জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধ কোটি টাকারও বেশি এই চক্রটি আত্মসাৎ করেছে।
এ ঘটনার শিকার হয়ে বহু মানুষ বিভিন্ন সময়ে থানায় জিডি করলেও দীর্ঘদিন আসল অপরাধীদের নাগাল পাওয়া যায়নি। পরে মহম্মদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান টুটুল, সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাসুদ রানা ও সাপ্তাহিক একুশে নিউজ পত্রিকার সম্পাদক হাসানুজ্জামান সুমনের উদ্যোগে অন্যান্য সাংবাদিকদের সহায়তায় প্রতারকদের ধরার চেষ্টা অব্যাহত থাকে। অবশেষে হাসানুজ্জামান সুমন রমনা থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করলে বিষয়টি নতুন গতি পায়। প্রায় সাত মাসের অনুসন্ধানের পর অবশেষে চক্রটির অবস্থান শনাক্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ।
২৭ আগস্ট বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে ৪টা ৩০ মিনিটের মধ্যে মহম্মদপুরে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় চারজনকে। তারা হলেন—১.তানভীর রহমান রাজু, সাবেক সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু মিয়ার ছোট ছেলে, ২.আনোয়ার হোসেন শাহিন, সাংবাদিক ও মহম্মদপুর সরকারি এস. কে. এইচ. ইনস্টিটিউশন মডেল স্কুলের শিক্ষক; ৩.জান্নাতুল ফেরদৌস টুকটুকি, স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী মুকুল মিয়ার মেয়ে
৪.শিমুল মিয়া, কম্পিউটার ব্যবসায়ী, বাড়ি জাঙ্গালিয়া গ্রামে। অভিযানে তাদের ব্যবহৃত পঞ্চাশের অধিক সিম কার্ড, মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও বিভিন্ন ডিভাইস জব্দ করা হয়।
বিশেষ তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তারকৃত রাজু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে আপাতত স্থানীয় ইউপি সদস্য তানজির রহমান সোহাগের জিম্মায় রাখা হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে সংগৃহীত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
দীর্ঘদিন ধরে “খবর মহম্মদপুর” ফেক আইডির ভয়ভীতি ও মানসিক নির্যাতনে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল। অনেক পরিবার অশ্লীল ভিডিও ও ছবি প্রকাশের কারণে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। ডিবি পুলিশের এ অভিযানে মহম্মদপুরের সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, এই অভিযান ও গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এলাকায় এমন অপতৎপরতার স্থায়ী অবসান ঘটবে। পাশাপাশি নতুন করে কেউ ফেক আইডি ব্যবহার করে প্রতারণায় জড়ানোর সাহস পাবে না এবং সমাজে আবারও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে।
মহম্মদপুরের সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ফেক আইডির ভয়ভীতি ও মানসিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ ছিল। অসংখ্য পরিবার অশ্লীল ছবি ও ভিডিও প্রকাশের কারণে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাই ডিবি পুলিশের এই বিশেষ অভিযান স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে বিশাল স্বস্তির সঞ্চার করেছে।
স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করেছেন, এই গ্রেপ্তার ও অভিযানের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপকর্মের পুনরাবৃত্তি রোধ হবে এবং মহম্মদপুরসহ আশপাশের এলাকায় সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।