অন্যান্য

তিন গ্রাম ১৭ দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, পসিবের নেই উদ্যোগ

  প্রতিনিধি 21 October 2024 , 2:21:15 প্রিন্ট সংস্করণ

আনোয়ার সাঈদ তিতু

   , কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনযাপন করছেন তিন গ্রামের প্রায় সাড়ে তিনশ গ্রাহক। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের কবলে পড়ে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চর শাখাহাতী, গয়নার পটল ও শহিদুল মিস্ত্রির গ্রামের শত শত গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকলেও চালু করার কোনও উদ্যোগ নেয়নি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)। ফলে বিড়ম্বনায় পড়েছেন তিন গ্রামের শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ব্রহ্মপুত্রের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে চিলমারী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে সরকার। চরের গ্রামগুলোতে বৈদ্যুতিক খুঁটির মাধ্যমে গ্রাহকদের বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এতে কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের মুখে সরবরাহ লাইনের খুঁটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। কিছু খুঁটি নদীতে পড়ে যায়। ভাঙনে সরবরাহ লাইন নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয়রা বিদ্যুৎ বিভাগকে অবগত করলেও তারা আমলে নেয়নি। এ অবস্থায় গত ৪ অক্টোবর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় পবিস। সরকারি সম্পদ নদীতে ভেসে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পবিস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্থানীয়রা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা কয়েকটি খুঁটি স্থানান্তর করে। সরবরাহ লাইনও স্বাভাবিক করে। তবে তখন থেকে আর বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করেনি পবিস। গত ১৭ দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছন্ন হয়ে আছেন ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের প্রায় সাড়ে তিনশ গ্রাহক।

শাখাহাতী গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম ও মাইদুল জানান, ভাঙনে বেশ কিছু বৈদ্যুতিক খুঁটি নদীতে চলে গেছে। গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে কিছু খুঁটি সরিয়ে নিয়ে সরবরাহ লাইন মেরামত করেছে। এখনও বিভিন্ন স্থানে খুঁটি পড়ে আছে। লাইন মেরামত কিংবা বিদ্যুৎ চালু করা নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কোনও মাথাব্যথা নেই।

মাইদুল বলেন, কত খুঁটি যে নদীতে চলে গেছে তার ঠিক নাই। চিলমারীর দায়িত্বে থাকা এজিএম ও ডিজিএমকে জানালে তারা বলেন সব নদীতে গেলেও আমাদের কিছু করার নাই। কিছু খুঁটি স্থানীয়রা সরিয়ে নতুন করে স্থাপন করেছে। কিন্তু তারা দেখতেও আসছে না, বিদ্যুৎ চালুও করছে না। আমরা অন্ধকারে আছি। বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।

ভোগান্তিতে থাকা গ্রাহক গওছুল মুন্সি ও নুরু মিয়া বলেন, আগে সোলার ব্যবহার করতাম। তখনই ভালো আছিল। বিদ্যুৎ আসার পর সোলার বাদ দিছি। পইড়া থাইকা সব নষ্ট হইছে। অহন বিদ্যুৎ নাই। আমরা অন্ধকারে পইড়া গেছি।

লাইন মেরামতে অংশ নেওয়া স্থানীয় ইলেক্ট্রিশিয়ান আপেল বলেন, চেয়ারম্যান বিদ্যুতের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে আমাদেরকে লাইন মেরামত করতে বলেন। আমরা করি। কিন্তু এরপর বিদ্যুতের লোকজন লাইন দেখতে আসে নাই, বিদ্যুৎ চালুও করে নাই। এখন বলতেছে লাইন নাকি অবৈধ। সাড়ে তিনশ বাড়িতে কারেন্ট নাই। আমি আজ (রবিবার) থানাহাট অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করছি। তারা বলে, আমি কেন লাইন ঠিক করছি? আমার নামে নাকি মামলা হবে।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতেছি। ডিজিএম, এজিএম সবাইকে বলছি, তারা খালি বলছে দেখি দেখি। ইঞ্জিনিয়ার ফোন ধরেন না।

পবিস চিলমারী জোনাল অফিসে যোগাযোগ করে বিদ্যুৎ বিভাগের অবহেলা নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের সত্যতা মেলে। গ্রাহকদের অন্ধকারে থাকা নিয়ে যেন তাদের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই।

চিলমারী জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) মো. আলামিন বলেন, ‘তারা (স্থানীয়রা) নিজে নিজে লাইন নতুন করে নির্মাণ করেছে। তাহলে নতুন পাওয়ার প্ল্যান করে বিদ্যুৎ নিয়ে নিক! এটা তো আমাদের রুলস ও রেজুলেশনে পড়ে না। এখন কোনোভাবে লাইন দেওয়ার সুযোগ নাই। বিস্তারিত জানতে হলে আপনি অফিসে আসেন। ডিজিএমের সঙ্গে কথা বলেন।’

চিলমারী অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মোস্তফা কামালকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি। কিছুক্ষণ পরে আবারও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

কয়েক শত গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকলেও তা অবগত নন কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পবিস এর জেনারেল ম্যানেজার মো. মহিতুল ইসলাম। এই প্রতিবেদকের কাছে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন তিন গ্রামের নাম জেনে নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’

আরও খবর

ধামইরহাটে গণঅধিকার পরিষদের মনোনয়ন প্রত্যাশায় লিফলেট বিতরণ

শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে করণীয় প্রসঙ্গে মতবিনিময় সভা।

আওয়ামী সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মোকতাদিরের ফাঁসির দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ -মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

দরিদ্র পরিবার অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে না দেওয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রের বিষপান,

একটা কিনলে অন্যটা কেনার টাকা থাকে না ঝিনাইদহ প্রতিনিধি চার সদস্যের পরিবার নিয়ে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ঋষিপাড়ায় থাকেন ফজলুল রহমান। ভ্যান চালিয়ে দিনে আয় করেন ২৫০-৩০০ টাকা। এর অর্ধেক চলে যায় কিস্তি দিতে। বাকি টাকায় দৈনন্দিন সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে ফজলুর হরিণাকুণ্ডুর একটি দোকানে ডিম কিনতে এসেছিলেন। দাম শুনেই তিনি হতবাক। প্রতি হালি ডিমের দাম চাওয়া হচ্ছে ৫৬ টাকা। ফজলুর লোকমুখে শুনেছেন, সরকার ডিমের দাম কমিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দাম এত বেশি কেন? জিজ্ঞেস করতেই দোকানি বলেন, ‘নিলে নেন, না হলে অন্যখানে যান।’ পকেটের অবস্থা ভালো ছিল না ফজলুরের। বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি। এর আগে গিয়েছিলেন স্থানীয় কাঁচাবাজারে। শাকসবজিসহ সব পণ্যের অস্বাভাবিক দামে হতাশা ঘিরে ধরে তাঁকে। আয়ের সঙ্গে খরচের হিসাব মেলাতে পারছিলেন না। ফজলুর রহমান বলেন, ১৫ দিন আগেও প্রতি পিস ডিমের দাম ছিল ১২ টাকা। এখন সেটার দাম কোথাও ১৩ টাকা ৫০ পয়সা আবার কোথাও ১৪ টাকা। হালিতে এই ১৫ দিনের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে ৬-৮ টাকা। শাকসবজি, মাছ, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচসহ সবকিছুর দামই বেড়েছে। এভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকলে সীমিত আয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। ২৫০-৩০০ টাকা আয়ের মধ্যে ঋণ নিয়ে কেনা ভ্যানের কিস্তির জন্য দিতে হয় ১৫০ টাকা। বাকি ১০০-১৫০ টাকায় চাল, ডাল, তেল আর তরিতরকারি কেনা যায় না। একটা কিনলে অন্যটা কেনার টাকা থাকে না। কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন সাগর হোসেন। তিনি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত। হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার শুড়া এলাকায় থাকেন স্ত্রী, দুই সন্তান ও মা-বাবা নিয়ে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ছয় সদস্যের সংসারে খরচ চালাতে হিমশিম অবস্থা তাঁর। সাগর বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে সবকিছুর দাম বেড়েছে। কোনো কোনো পণ্যের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি। ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে ১৫ অক্টোবর সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ১৯ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা প্রতি পিসের ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়। বুধবার থেকে এ দামে ডিম বিক্রির কথা থাকলেও বাজারের চিত্র ভিন্ন। একেক জায়গায় একেক রকম দাম নেওয়া হচ্ছ। উপজেলা শহরের কোথাও ১৩ টাকা ৩৩ পয়সা, কোথাও ১৩ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের বাজারে ১৪ টাকা করে। লাগামহীন ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দামও। বাজারভেদে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০ টাকা কেজি। বৃহস্পতিবার সকালে শহরের কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয় ২৮০-৩২০ টাকায়। পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা। লাউ পিস ৫০-৬০ টাকা, আলুর ৬০ টাকা কেজি। ৩০ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। ৪০ টাকার কাঁচাকলা ৬০ টাকা। ৪০ টাকার শসা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। গত সপ্তাহের চেয়ে এদিন ঢ্যাঁড়শের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকায়। প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ টাকা থেকে হয়েছে ৪০-৫০ টাকা। বেগুন বিক্রি হতে দেখা গেছে ১৩০-১৫০ টাকায়। ৫০ টাকার নিচে বাজারে সবজি মিলছে না। ব্যবসায়ীদের দাবি, সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। কাঁচাবাজারের বিক্রেতা খাইরুল ইসলামের ভাষ্য, কয়েকদিন আগে টানা বৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া অনেক এলাকায় বন্যা হচ্ছে। মানুষের সবজি ও কাঁচামালের ক্ষতি হয়েছে। এতে সরবরাহ কম। তাই সব কিছুর দাম বেড়েছে। দাম কমাতে হলে আগে আড়তদারদের নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানান পাইকারি বিক্রেতা আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, আড়ত থেকে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করেন। হরিণাকুণ্ডু উপজেলা মোড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে আশরাফুল ইসলামের। তাঁর দাবি, খামারির কাছ থেকেই প্রতি পিস ডিম কিনতে হয় ১৩ টাকা ২০ পয়সায়। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ রয়েছে। খুচরায় বিক্রি করছেন ১৩ টাকা ৩৩ পয়সায়। আনার সময় অনেক ডিম ভেঙে যায়। ফলে লাভ থাকে না। শুধু ক্রেতা ধরে রাখতেই ডিম বিক্রি করছেন। উৎপাদক ও পাইকার পর্যায়ে দাম নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ডিম বা ব্রয়লার মুরগির দাম খুচরা বাজারে কমবে না বলে মনে করেন তিনি। মাছের বাজারেও একই অবস্থা। এদিন সকালে হরিণাকুণ্ডু শহরের দৈনিক বাজারে প্রতি কেজি রুই ও কাতলা প্রকারভেদে বিক্রি হয়েছে ২৫০-৩৫০ টাকায়। পাঙাশ ও তেলাপিয়ার দর ১৫০-২৫০ টাকা; চ্যাঙ ও দেশি পুঁটি বিক্রি হয় ৩২০-৫০০ টাকায়। মাছ বিক্রেতা জয়নাল মিয়ার ভাষ্য, আড়তে তেমন মাছ আসছে না। অল্প পরিমাণে যা আসছে, অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আড়তদার কামাল উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের আড়তে মাছ আসে। কিছু এলাকায় বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে প্রচুর ঘের-পুকুর তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রচুর মাছ মারাও গেছে। ফলে সরবরাহ কমেছে, তাই দাম বেশি। ঝিনাইদহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের বলেন, এই এলাকায় খামারি নেই। ব্যবসায়ীরা পাবনা বা অন্য এলাকা থেকে বেশি দামে ডিম কিনেন। ফলে সরকারের বেঁধে দেওয়া দর নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তবুও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ডিমসহ সব নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। প্রতিনিয়ত বাজার তদারকি চলছে জানিয়ে ইউএনও আক্তার হোসেন বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শ্রীমঙ্গল যেন যানজটের শহর: ভোগান্তিতে জনজীবন

                   

জনপ্রিয় সংবাদ