অন্যান্য

কলাপাড়ায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজস্ব নিয়মে চলছে বিদ্যালয়, প্রধান শিক্ষককে শোকজ

  প্রতিনিধি 4 November 2024 , 1:32:19 প্রিন্ট সংস্করণ

সৈয়দ রাসেল, কলাপাড়া(পটুয়াখালী)

পটুয়াখলীর মহিপুর থানাধীন ১২৮ নং চর ধুলাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে ব্যাপক অনিয়ম। গত ২৭ অক্টোবর (রোববার) স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ৯টায় সরকারি নিয়মানুসারে প্রাথমিকের পাঠদান চলার কথা থাকলেও এসব নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে নিজস্ব নিয়মে চলছে বিদ্যালয়।

সকাল ১১ টায় প্রধান শিক্ষক আমিন বিশ্বাস আসলেও, আরেক সহকারী শিক্ষক (প্রধান শিক্ষকের মেয়ে) সাওদা ছুটিতে বলে জানান তবে ছুটির কোন ডকুমেন্টস দেখাতে পারেনি প্রধান শিক্ষক। সাংবাদিক দেখে তড়িঘড়ি করে অফিস কক্ষে ঢুকে বিগত কয়েক দিনের স্বাক্ষর একসাথে করেন সহকারী শিক্ষিক আকলিমা (প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী) । তবে হাজিরা খাতায় গত কয়েকদিন প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতি দেখা গেছে।

প্রধান শিক্ষকের একক আধিপত্য ও অনিয়ম অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন শিরোনামে পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর নড়ে চড়ে বসেন শিক্ষা কর্মকর্তা এবং পরিদর্শন করে শোকজ করেন ওই শিক্ষককে।

গত বৃহস্পতিবার (৩১অক্টোবর) উপজেলা শিক্ষা শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস স্বাক্ষরিত একটি শোকজ নোটিশে আগামী ৩ কর্ম-দিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঠিকমতো আসেন না। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কোনো ক্লাস না নেওয়ায় গত ৭-৮ বছর ধরে স্কুলটি একবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পালা। শিক্ষকরা অনিয়মিত হওয়ার কারণে বিদ্যালয়টিতে কমতে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। অভিযোগ রয়েছে একই ফ্যামিলির প্রধান শিক্ষক সহ তিনজন থাকায় তারা পালা বদল করে ক্লাস নিচ্ছে। বাবা আসলে মেয়ে আসেনা মা আসলে বাবা আসে না এ যেন চোর পুলিশের খেলা খেলছে শিক্ষার্থীদের সাথে। যার ফলে এখানে বাচ্চাদের দিলে তাদের লেখাপড়ার কোনো উন্নতি হয় না, তাই বাধ্য হয়ে তাদের অন্যত্রে নিয়ে যেতে হয় এমন অহরহ অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সজীব তালুকদার সহ স্থানীয় একাধিক অভিভাবকরা বলেন, সব অনিয়মের অবসানের মাধ্যমে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ও সুন্দর এবং স্বাভাবিক পাঠদানের মধ্য দিয়ে আবারো মুখরিত হয়ে উঠুক। আমরা এমনটাই প্রত্যাশা করি।

অভিভাবক সদস্য মোহাম্মদ সুফিয়ান তালুকদার আক্ষেপ করে বলেন, শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাসে আসে না , নয়টার সময় আসার কথা থাকলেও তারা কখনো ১০টা কখনো ১১টায় আসেন।তারা ঠিক মতো ক্লাস নেয় না। প্রধান শিক্ষক, তার মেয়ে স্ত্রী সহ একই পরিবারের তিনজন তারা একদিন এসে দুই-তিন দিনের সই একবারে দিয়ে চলে যায়। আমরা চাই প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে চলুক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, শোকজ নোটিশে কিছুই হবে না, উপর মহল কে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে একই বিদ্যালয়ে থাকার চেষ্টা করছে। তাদেরকে অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলি করার জোর দাবি জানাচ্ছি। বর্তমানে বিদ্যালয়ে কাগজে-কলমে মোট শিক্ষার্থী ১১৭ জন। কিন্তু উপস্থিতি হয় প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ জন। শিক্ষার্থী কম থাকায় অবসর সময় কাটাতে হয় শিক্ষকদের।

সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা বেগম তাদের অনিয়মের কথা স্বীকার করে প্রতিবেদককে মোটা অংকের সম্মানী দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নিউজ না করার অনুরোধ জানান।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক আল আমিন বিশ্বাস বলেন, আমি, আমার স্ত্রী, ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরী করলেও কখনো ব্যক্তিগত প্রভাব খাটাইনি। শারীরিক অসুস্থ থাকার কারনে গত দুই দিন স্কুলে আসেননি তবে ছুটি না নিয়ে অনিয়মের দ্বায় শিকার করেন।

তিনি আরো বলেন, সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা গত বৃহস্পতিবার স্কুলে আসেনি রবিবার এসে স্বাক্ষর করার সুযোগ নেই। মেয়ে সাওদা সহকারী শিক্ষিকার অনুপস্থিতির বিষয় জানতে চাইলে ছুটিতে আছে বলে জানান তবে ছুটির কাগজ দেখাতে পারেন নি।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস, শোকজ’র বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দায়িত্বে অবহেলার কারণে ১২৮নং চর ধুলাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে এবং আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। শোকজ নোটিশের জবাব পাওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ