অন্যান্য

অস্তিত্বহীন-বন্ধ মিলের সঙ্গে কুষ্টিয়া খাদ্য বিভাগের চুক্তি

  প্রতিনিধি 7 December 2024 , 5:09:23 প্রিন্ট সংস্করণ

 

 

মোঃ জীবন শেখ, জেলা প্রতিনিধিঃ

 

কুষ্টিয়া খাদ্য বিভগের অসাধু কর্মকর্তারা অভিনব দুর্নীতির জাল বিস্তার করেছেন। অস্তিত্ব নেই এমন কয়েকটি চালকলের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বিভিন্ন বন্ধ ও অস্তিত্বহীন মিলের তথ্য গোপন করে মিল মালিকদের নামে চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। তারা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

 

কুষ্টিয়ার মিরপুর ও দৌলতপুরসহ কয়েকটি উপজেলায় অস্তিত্বহীন ও‌ লোকসানের‌ বোঝা মাথায় নিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলের নামে দেওয়া হয়েছে বরাদ্দ। আবার বরাদ্দের বিষয়ে জানেন না অনেক মিল মা‌লিক। সাধারণ মিল মালিকদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজসে দিনের পর দিন চলছে এই অনিয়ম।

 

জেলা খাদ‌্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্রে জানা গেছে, লাইসেন্স থাকা সাপেক্ষে চালকল সচল এবং চাল সরবারহ করার সক্ষমতা আছে তাদেরকেই চালের বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিবছর একটি বিশেষ কমিটির মাধ্যমে সেইসব চালকলের তালিকা তৈরি করা হয়। বরাদ্দ পাওয়ার পর চালকল মালিকরা খাদ্য অফিসের সঙ্গে চুক্তি করে চাল সরবারহ করে থাকেন। চলতি আমন মৌসুমে কুষ্টিয়ায় ৪৭ টাকা কেজি দরে ১৯ হাজার মেট্রিক টন চাল কিনবে খাদ্য বিভাগ। আগামী ২৮ ফেব্রুয়া‌রি পর্যন্ত চলবে সংগ্রহ কার্যক্রম।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে প্রায় ৫ বছর আগে বন্ধ হয়েছে গেছে জেলার মিরপুর উপজেলার নিমতলা এলাকার শেখ রাইচ মিল। মিলের স্থাপনা ভেঙে সেখানে এখন চলছে চাষাবাদের প্রস্তুতি। সেই মিলের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২ মেট্রিক টন চাল। আবার একই এলাকার বাসনা রাইচ মিল বিক্রি হয়ে গেছে চার বছর আগে। এই মিলের নামেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সাড়ে ১২ মেট্রিক টন চাল।

 

একই অবস্থা মিরপুরের বিআর রাইচ মিলের। মালিক বজলুর রহমান জানান, নবায়ন না করায় বাতিল হয়ে গেছে তার মিলের লাইসেন্স। কিন্তু তার মিলের নামেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ১২ মেট্রিক টন চাল। অথচ এসব বরাদ্দের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে তিনি দাবি করেন।

 

বন্ধ ‌শেখ রাইচ মিলের মা‌লিক মমিনুর রহমান বলেন, আমাদের মিলটা হাসকিং মিল। এটা ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২০ সাল পর্যন্ত মিলটি চালু থাকলেও এরপর থেকে বন্ধ আছে। মিলের জন্মলগ্ন থেকে দুইবার আমরা সরকারের কাছে চাল দিতে পেরেছি। বাদবাকি সময় যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দল সিন্ডিকেট চালায়। আমাদের লাইসেন্স আমরা চোখেও দেখি না। এখনো একই অবস্থা। আমাদের সই-স্বাক্ষরও লাগে না। ওরাই সই করে, ওরাই বরাদ্দ নেয়।

 

বাসনা রাইচ মিলের বর্তমান মা‌লিক রাশেদুজ্জামান বলেন, মিলটি চালাতে লোকসানে পড়তে হচ্ছে। তাই আমরা মিলটি বন্ধ করে দেই। আর ফুডের লাইসেন্সের বিষয়ে আমি কিছু জানি না, বা কোনো কাগজ হাতে পাইনি।

 

মিল‌টির আগের মা‌লিক আমিনুল ইসলাম জানান, মিল‌টি চালু থাকা অবস্থায় ২০ বছর আগে তিনি ২০ লাখ টাকা সিসি লোন উঠান। সেই লোন পরিশোধ করতে না পারায় সুদের টাকা অনেক বেড়ে যায়। যার ফলে তিনি ২ বছর আগে মিল বিক্রি করতে বাধ‌্য হন।

 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন মিল মা‌লিক বলেন, শুধু শেখ, বাসনা বা বিআর রাইচ মিলই নয়, মিরপুর এবং দৌলতপুর উপজেলায় চাল ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া চালকলের মধ্যে অর্ধেকের বেশি অস্তিত্বহীন অথবা বন্ধ।

 

তা‌রা অভিযোগ করে বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজসে দিনের পর দিন চলছে এই অনিয়ম। সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদের সাহস করে না। এর প্রতিকার চেয়েছেন তারা।

 

এমন অনিয়মের সত‌্যতা স্বীকার করে কু‌ষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, মিরপুরের বে‌শিরভাগ চালকলের অস্তিত্ব নেই। দৌলতপুরেও একই অবস্থা। রাজনৈতিক কারণে আমরা কিছু বলতে পা‌রি না।

 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মিরপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা জিন্নাত জাহান বলেন, তিনজনের একটা কমিটি করে তালিকা তৈরি করে পাঠিয়েছিলাম। এ রকম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমি মিলারদের বলেছি আমার ইন্সপেক্টর যদি কোনো মিলের তথ্য গোপন করে তাহলে আপনারা জেলা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত জানান, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

কু‌ষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আল ওয়াজিউর রহমান বলেন, প্রত্যেকটা সংগ্রহ মৌসুমের শুরুতেই আমাদের একটা সার্ভে হয়। এই মৌসুমে যে মিলটা ভালো আছে পরের মৌসুমে সেই মিলটা ভালো নাও থাকতে পারে। কেউ বিক্রিও করে দিতে পারে। যেসব মিলের অস্তিত্ব আছে বা চালু আছে আমরা সেই মিলগুলোকে সার্ভেতে রেখেছি। নোটিশ বোর্ডে এবং মিটিংয়ে তালিকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা আছে সুনির্দিষ্টভাবে যদি কোনো মিল সম্পর্কে কোনো অভিযোগ থাকে তবে সঙ্গে সঙ্গে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বরাদ্দ বাতিল করা হবে। আপনি যে মিলগুলোর বিষয়ে বললেন সেইগুলোর বিষয়ে ইমিডিয়েট ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ