অন্যান্য

পথশিশু ও শীতার্তদের পাশে এগিয়ে আসুন

  প্রতিনিধি 4 January 2025 , 5:32:53 প্রিন্ট সংস্করণ

 

 

জেমস আব্দুর রহিম রানা:

শীত আসে ধনীদের জন্য খুশির বার্তা নিয়ে আর অসহায় গরীব ও পথশিশুদের জন্য আসে দুঃখ হয়ে। শীতের তীব্রতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকদিন যাবৎ সূর্যের দেখা মিলছে না, কুয়াশাচ্ছন্ন ও সূর্যবিহীন দিন যাচ্ছে। সূর্যের দেখা না পাওয়ায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় লোকজন ও পথশিশুরা শুকনো কাঠ, ঘাস ও শুকনো ময়লা আবর্জনা স্তূপে আগুন জ্বালিয়ে শরীরে তাপ নেয়। শীতের এমন সময়ে কনকনে শীতে শীতবস্ত্রহীন অসহায় লোকজন ফুটপাতে রাত যাপন করা লোকজন এবং পথশিশুরা তরতর করে কাঁপতে শুরু করে।

 

আমাদের আঞ্চলিক কিছু কথা আছে, ‘পৌষের শীতে ভূত কাপে আর মাঘের শীতে বাঘ ডোরে’(গর্জন)। ‘পৌষ গেল, মাঘ আইল শীতে কাঁপে বুক/দুঃখীর না পোহায় রাতি হইল বড় দুখ’।’ গ্রামবাংলার এ কথাগুলোর মাধ্যমে আমাদের দেশের অসহায় হতদরিদ্র মানুষদের শীতকালীন দৃশ্য ফুটে উঠে। সৃষ্টিকর্তার অপার ইচ্ছায় ও প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ঋতুর পালাবদল ঘটে। এই পালা বদলের হাত ধরেই চলে আসে শীত।

শীতকালের এই ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে সকল মানুষেরই গরম কাপড়ের প্রয়োজন। কিন্তু গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য এদেশের অনেকে মানুষেরই নেই। তাই আজ আমাদের সবাইকে এই সব মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের সবার জন্য গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

এ দেশের আবহাওয়া বরাবরই ভালো এবং শীত ও গরমের মাঝামাঝি। তাপমাত্রা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতো উচ্চ নয় আর শীত প্রধান দেশগুলোর মতো কমও নয়। গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতকালে এই তাপমাত্রা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে এবং কখনো কখনো এর থেকেও নিচে নেমে আসে। তখন বাতাস খুব ঠান্ডা হয়ে যায় এবং মানুষের তীব্র শীত অনুভূত হয়। কখনো কখনো খুব বেশি কুয়াশা পড়ে এবং কুয়াশার কারণে এসময়ে কয়েক ফুট দূরের কিছু দেখা যায় না। অনেক সময় একটানা কয়েকদিন সূর্যের আলোও দেখা যায় না। আর দেখা গেলেও আলোর উজ্জ্বলতা থাকে না। ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক পথে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়, নদীপথে লঞ্চ-জাহাজ চলাচল ব্যাহত হয় এবং আকাশপথে বিমান চলাচল ব্যাহত হয়। এ সময় অনেক দুর্ঘটনাও ঘটে এবং মানুষের প্রাণহানিও হয়। আর্থিকভাবে সচ্ছল মানুষেরা তাদের সক্ষমতার কারণে প্রয়োজনীয় শীত নিবারক কাপড়, কম্বল ও লেপ-তোষক কিনে এবং বাসায় ওয়াটার হিটার ব্যবহার করে নিজেদের শীত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু গরিব মানুষেরা কষ্ট পায় বেশি। তাদের অধিকাংশ ঘরবাড়ি ছনের বা টিনের। এসব ঘরে এমনিতেই ঠান্ডা একটু বেশিই লাগে। আবার আর্থিক সংকটের কারণে তারা প্রয়োজনীয় গরম কাপড়, কম্বল এবং লেপ-তোষক কিনতে পারে না। পানি গরম করার জন্য ওয়াটার হিটার বা গিজার কেনার ক্ষমতা এসব গরিবদের নাই। ফলে শীতকালে গরিব মানুষদের কষ্টটা স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি। এ অবস্থায় এই সব গরিব মানুষের প্রয়োজনীয় গরম কাপড়, কম্বল ও লেপ-তোষক দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এটা আমাদের সবারই ধর্মীয়, নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্ব।

 

সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালীদের শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। বিশেষ করে আমাদের নজর দিতে হবে ছিন্নমূল খেটে খাওয়া মানুষ, শিশু ও বয়স্কদের প্রতি। মানবতার পাশে দাঁড়ানোই হচ্ছে সর্বোত্তম কাজ। যা একজন মানুষকে উদার ও বড় করে তোলে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, তাই গরিব-অসহায়, দুস্থের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা প্রদর্শন ও সহানুভূতিশীল হওয়া অত্যাবশ্যক।

সারাদেশের সামর্থ্যবান মানুষেরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে প্রতিটি শীতার্ত মানুষকে সাহায্য করাটা কঠিন এবং অসম্ভব নয়। দেশের এক কোটি মানুষ যদি আজ প্রত্যেকেই মাত্র একশত টাকা করে দান করে তাহলে নিমিষেই জোগাড় হয়ে যেতে পারে শত কোটি টাকা। আর যদি দান করে প্রত্যেকেই এক হাজার টাকা, তাহলে নিমিষেই জোগাড় হতে পারে হাজার কোটি টাকা। এই উদ্যোগ আমাদের গ্রহণ করতে হবে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, শিল্পপতিসহ ধনী মানুষদের আজ শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব তা যদি আমরা শীতার্তদের সাহায্য করতে পারি, শীতার্ত মানুষদের কল্যাণে তহবিল গঠন করতে হবে। উদ্যোগ নিলে সেই উদ্যোগে এদেশের মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে সহযোগিতা করবে এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন এ বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। আজ শুধু প্রয়োজন উদ্যোগের এবং প্রয়োজন উদ্যোক্তার। শীতে যারা কষ্ট পাচ্ছে তারা আমার-আপনার মতই মানুষ। তারা প্রত্যেকেই আমাদের কারো না কারো পিতামাতা, কারো না কারো ভাইবোন অথবা কারো না কারো আত্মীয়। সর্বোপরি তারা মানুষ এবং আমাদের সমাজেরই অংশ।

এই অসহায় ও গরিব মানুষের জন্য কমপক্ষে একটি সুয়েটার ও একটি কম্বলের ব্যবস্থা সহজেই করা যায়।

পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র সরবরাহ করে সাধ্যমতো শীতার্তদের পাশে এসে মানবিক সহায়তায় এগিয়ে এলেই শীত নিবারণের পাশাপাশি তাদের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব।

মানবতার কল্যাণে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সাহায্য করাটা ধর্মীয় কাজেরই অংশ। তাই আজ আর কোনো ধরনের অজুহাত নয়, কোনো ধরনের পিছুটান নয়।

আসুন, আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে সবাই মিলে সাধ্যমতো শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই। এটি আমাদের মানবিক দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্ববোধই হতে পারে অসহায়ের সহায়।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ